ঢাকা, ১৭ এপ্রিল ২০২৫ইং (দৈনিক দেশপ্রেম রিপোর্ট): বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলীর ১৩তম গুম দিবসে তার সন্ধান দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে মানুষের মধ্যে ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রশাসনের বিভিন্নস্তরে ফ্যাসিবাদের দোসররা অবস্থান করছে সরকারের তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কিন্তু আমরা জেনেছি বিএনপির গন্ধ পেলেই প্রশাসন থেকে সঙ্গে সঙ্গে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তার মানে কোনো একটা বিশেষ এজেন্ডা, নকশার মধ্য দিয়ে এই সরকার চলছে। এটাই আজকে মানুষের কাছে বড় প্রশ্ন। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছে।
রাজনৈতিক সহকর্মী ইলিয়াস আলী প্রসঙ্গে সাবেক ছাত্রদলের সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের নির্বাচিত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলাম। আমরা ইলিয়াস আলীর অন্তরের পার্টটা দেখেছিলাম। শিশুর মতো তার অন্তর। জোরালো কথা বলতো, প্রতিবাদ করতো। না কে না-ই বলতো। না-এর পেছনে যে অন্য কিছু থাকে সেটা সে বুঝতো না।
আন্দোলনে ইলিয়াস আলীর ভূমিকার কথা তুলে ধরে রিজভী বলেন, দেশপ্রেম ও দলের প্রতি যে আনুগত্য, অবিচল আস্থা সেটা আমাদের অনেকের মধ্যে দেখি না। দলের কর্মসূচি, যেমন সিলেটে হরতাল-সেটা কীভাবে হচ্ছো তা ম্যাডামকে জানানোর জন্য উদ্রীব থাকতো, যে কাজটি করলে ম্যাডাম খুশি হবেন সে কাজের জন্য তিনি ব্যাকুল থাকতেন।
রিজভী বলেন, তখন টিপাইমুখ বাঁধ ভারতীয় সরকার দেবে, বাঁধটা হবে সিলেটের সুরমা কুশিয়ারা দিয়ে। এটা নিয়ে সারা দেশে হৈচৈ হচ্ছে। বুদ্ধিজীবীরা প্রতিবাদ করছেন, বিএনপি কর্মসূচি দিচ্ছে। প্রথমে একটা লং মার্চ হলো। সিলেটে আরও কিছু করতে হবে-এটা নিয়ে তার ভাবনা। অনেকেই বলে, আমারও বিশ্বাস এই যে তার দেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদী ভূমিকা-এ কারণেই আজ আমাদের কাছ থেকে অদৃশ্য হয়ে পড়েছে। এটা মিথ্যা নয়, অনেকখানিই সত্য। এটা যারা সহ্য করতে পারেনি, যাদের প্রতিভূরা বাংলাদেশে তৎকালীন ক্ষমতায় ছিলেন তাদের যৌথ প্রযোজনায় ইলিয়াস আলীকে আমরা হারিয়েছি।
তিনি বলেন, আজকে ইলিয়াস আলী নেই, চৌধুরী আলম, সুমনরা নেই। ড. ইউনূস সাহেব ক্ষমতায়, অনেক বিষয়ে অনেক তা বলছেন। কিন্তু যে ঘটনাবলী, গুম হয়ে বিএনপির যারা ১৫-১৬ বছর ধরে, বাড়িতে বাড়িতে, ঘরে ঘরে কান্নার রোল এখনো থামেনি। এদের আহাজারি এখনো আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হয়। ক্ষমতা চিরদিনের জন্য অটুট রাখতে শেখ হাসিনা রক্তাক্ত কর্মসূচি করেছে। গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, ক্রসফায়ার, গণতন্ত্র হরণ, মানুষের কথা বলা যায় না প্রতিনিয়ত আমাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে-এরই মধ্যে সমমনা দলগুলো বিএনপির নেতৃত্বে আন্দোলন-সংগ্রাম করে শেখ হাসিনার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে, প্রতিহত করে ১৫ বছর ধরে এতো যে আত্মত্যাগ তারই ফলশ্রুতিতে গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্ররা-আমরা সাফল্যমণ্ডিত হই।
রিজভী আহমেদ বলেন, সরকার একেবারেই কাজ করছে না এটা আমি বলব না। হয়তো কিছু করছেন। আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৬০ লক্ষ মামলা। ড. ইউনূস আজকে ৬০ মাস ক্ষমতায় আছেন মামলাগুলো তো প্রত্যাহার করাবেন। এতোগুলো ঘটনা এবং ৬০ লাখ মামলার ফলশ্রুতিতেই আপনারা ক্ষমতায়। কমিশন গঠন করে বা দ্রুত দায়িত্ব পালন করে হোক এটার জন্য তো আপনি কিছুই করেননি। আজও আমাদেরকে কেনো আদালতের বারান্দায়, বারান্দায় ঘুরে বেড়াতে হবে?
নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির সিনিয়র নেতা বলেন, গণতন্ত্রের জন্য, ভোটাধিকারের জন্য ১৫-১৬ বছরের যে সংগ্রাম, সে ভোটাধিকার নিয়ে কেন এতো বিলম্ব হচ্ছে, কেন নির্বাচনের বিকল্প হিসেবে সংস্কারকে দাঁড় করাচ্ছেন। আমরা ভোটের কথা বললেই আরও কিছুকে বিকল্প হিসেবে দাঁড় করাচ্ছেন। গণতন্ত্র মানেই তো নির্বাচন। বিভিন্ন কমিশন গঠন করেছেন রাজনৈতিক দলের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচনী ওয়াদা কোন ডিসেম্বর-জুনের এক ধরনের দোলনায় ঝুলছে। সরকারের নির্বাচনী ওয়াদা ডিসেম্বর আর জানুয়ারির মধ্যে পেন্ডুলামের মতো দোল খাচ্ছে কোন। এটা তো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জবাব দেয়া দরকার।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, আমরা জানতে পারি বিএনপির সাথে সম্পর্কযুক্ত বা বিএনপির পরিবারের যদি কেউ প্রশাসনের কোথাও থাকে তাকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয় না। বিএনপির পরিবারের সম্পৃক্ততা পেলে তাকে সাথে সাথে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তার মানে কোনো একটা বিশেষ এজেন্ডা, নকশার মধ্য দিয়ে এই সরকার চলছে? এটাই আজকে মানুষের কাছে বড় প্রশ্ন, এ নিয়ে মানুষের মধ্যে ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছে। জনগণের সাথে ছলাকলা করলে এটা কিন্তু ফলাফল ভালো হয় না।
গুম কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, গুম কমিশন গঠন করা হয়েছে। তারা কি কাজ করছে। সরকারের জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে একটা আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার ছিল। কোথায় ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, সাইফুল ইসলাম হিরো, সুমন, হুমায়ুন কবির পারভেজ, হিনাররা। এদেরকে ফিরিয়ে পাওয়ার জন্য সরকার কি ব্যবস্থা নিয়েছে? শেখ হাসিনার আয়না ঘর থেকে ব্যারিস্টার আবরার, আজমীরকে ফিরে আসতে দেখলাম, ভারত থেকে আমাদের সালাউদ্দিন সাহেবকে আসতে দেখলাম। সালাহউদ্দিনকে শেখ হাসিনা ভারতে ফেলে রেখেছিল। বাংলাদেশকে আর যেন এ খেলা দেখতে না হয়।
এ সময় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদীর লুনা, সাবেক এমপি আবুল খায়ের ভূঁইয়া, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, মীর শরাফত আলী সপু, আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply